মায়ানমার ভিসা কিভাবে করবেন, কোথায় করবেন এবং কত টাকা ও সময় সব জেনে নিন।
আমি মায়ানমার ভিসা করিয়েছি নিজেই একা এবং সরাসরি। যতগুলো কাগজ আছে সব নিজেরই সংগ্রহে থাকা এবং বাকিগুলো নিজেই পূরণ করেছি। অপস্য এ ব্যাপারে অনলাইনে বা বিভিন্ন ভাই ব্রাদারদের সহায়তা নিয়েছি।
মায়ানমার ভিসা হতে আমার সময় লেগেছে মাত্র তিনদিন। বুধবার জমা দিয়েছি। রবিবার নিয়ে আসছি। আমার স্লিপে লিখা ছিল রবিবারে গিয়ে নিয়ে আসার জন্য।
মায়ানমার ভিসার জন্য আমাকে কোন ফোন করে নাই। কল আসে নাই। কাউকে করে কিনা জানা নাই। তবে এক্সিকিউটিভ অফিসার বললো, প্রয়োজনে করতে পারে।
উল্লেখ্য, মায়ানমার এম্বাসি সরাসরি কারো সাথে সরাসরি ডিল করেনা। এদের নিজস্ব একটা এজেন্সি আছে। অনেকটাই থাইল্যান্ডের ক্ষেত্রে ভিএফএস বা সায়মনের মত। এরাই আপনার পাসপোর্ট আর পেপার্স জমা নিবে আবার এরাই নিজেরা জমা দিবে। আপনার সব পেপার্স ওকে হলে এরা কেবল নিবে। নয়তো আপনাকে ফিরায়ে দিবে। ভুল সংশোধন করতে বলবে।
এরা পেপার্স জমা দিতে গিয়ে যদি দেখে, এম্বাসি আপনার পেপার্স নিতেছেনা তাহলে আপনি এদের দেওয়া এম্বাসি ফি ফেরত পাবেন কেবল কিন্তু এদের সার্ভিস চার্জ ফেরত পাবেননা।
এদের সার্ভিস চার্জ ৮০০টাকা আর এম্বাসি ফি ৩৪০০ টাকা। মোট ৪২০০টাকা।
আমার কি কি ডকুমেন্ট লেগেছে।
থাইল্যান্ড, মালোয়েশিয়া বা সিঙ্গাপুরের জন্য যেসব ডকুমেন্ট লাগে। সেসব ডকুমেন্ট লাগে। বাড়তি কোন ডকুমেন্ট লাগেনা। নিম্নে আমি প্রতিটি ডকুমেন্ট বিস্তৃতসহ উল্লেখ করেছি। পড়ে নিবেন। প্রথমে ডকুমেন্টের নাম সিরিয়ালে আকারে দেওয়া। এরপরে সিরিয়ালের নাম্বার দিয়ে ক, খ, গ বিভাগ করে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি।
ফ্রেশ পাসপোর্টে এপ্লাই না করা ভাল। আমার সামনে একটা কাপলকে ফ্রেশ পাসপোর্ট দেখে ফিরায়ে দিয়েছে। তবুও আপনি চাইলে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
এজেন্সি না নিজে , কোনটা করলে ভাল হবে এটা জানতে চাইলে আমি বলবো, অপশ্যই নিজে করবেন এতে আপনার যে অভিজ্ঞতা হবে, সারা জীবন কলেজ-ভার্সিটি থেকে সে অভিজ্ঞতা পাবেননা। দয়া করে কেউ সময়ের স্বল্পতার কথা বলবেননা। আপনার প্রয়োজনে আপনি সময় বের করে নিবেন। এরপরে সময় না হলে এজেন্সি আছে।
এবার বলি ডকুমেন্ট কি কি লাগতে পারে।
১. পাসপোর্ট।
২. দুই কপি পাসপোর্ট সাইজ ছবি।
৩. এনআইডির কপি।
৪. এনওসি বা ট্রেড লাইসেন্স।
৫. ভিজিটিং কার্ড।
৬. পূর্বের ভিসার ফটোকপি।
৭. ব্যাংক স্টেটমেন্ট।
৮. ব্যাংকের সলভেন্সি সার্টিফিকেট।
৯. এয়ার টিকেট বুকিং।
১০. হোটেল বুকিং।
১১. কাভার লেটার।
১২. ভিসার আবেদন ফরম
১৩. ট্যুর আইডিনারী।
১৪. ইউটিলিটি বিলের কপি।
বিস্তারিত।
১.
(ক) ছয় মাসের মেয়াদ থাকতে হবে। ছয় মাসের কম হলে আপনার পাসপোর্ট নিবেনা।
(খ) কমপক্ষে দুই পাতা খালি থাকতে হবে।
(গ) পুরোনো পাসপোর্ট থাকলে একসাথে পিনআপ করে নিবেন।
২.
(ক) ছবিটা অপশ্যই সদ্য তোলা হতে হবে এবং ম্যাটস পেপারের ল্যাব প্রিন্ট হতে হবে।
(খ) খেয়াল রাখবেন ছবি যেন তিন মাসের পুরনো না হয়।
(গ) একই ছবি কোন ভিসাতে যেন না থাকে।
(ঘ) সাদা ব্যাকগ্রাউন্ডের হতে হবে।
৩.
(ক) অরজিনালটা ও নিয়ে যাবেন। তারা দেখতে চাইতে পারে।
(খ) এনআইডি না থাকলে বার্থ সার্টিফিকেট ইংলিশ কপি)
৪.
(ক) চাকুরীজীবি হলে এনওসির মেইন কপি আর ব্যবসায়ী হলে ট্রেড লাইসেন্সের কপি।
(খ) নোটারি এবং ইংলিশ ট্রান্সলেটসহ)
(গ) অফিসের আইডি কার্ড।
৫.
(ক) কালার এবং ইংলিশে।
(খ) চেষ্টা করবেন উন্নত এবং সুন্দর ডিজাইনেরটা দিতে।
৬.
(ক) পারলে কালার ফটোকপি দিবেন।
৭.
(ক) ছয় মাসেরটা দিবেন। তিন মাস হলেও হবে। তবুও ছয় মাসেরটা দিবেন।
(খ) অরজিনালটা দিবেন।
(গ) চাকুরী জিবি হলে মিনিমাম ৬০,০০০ পারলে আশি হাজার। ব্যবসায়ী হলে ১লাখ ৫হাজার বা ১ লাখ ১০ হাজার দেখবেন। শুধু ১ লাখ হলে চলবে। তবুও এভাবে দিবেন।
(ঘ) ভিসা না হওয়া পর্যন্ত টাকাগুলোয় একদম নড়বড় ঘটাবেননা। ব্যবসায়ী হলে সেটা ঠিক রেখে প্রতিদিন ২/৩ বার লেনদেন করবেন। আর চাকুরিজীবি হলে মান্থলির লেনদেন করবেন।
৮.
(ক) ফাইনাল ব্যালেন্স সার্টিফিকেটে উল্লেখ করবেন।
৯.
(ক) রিটার্ন টিকেটসহ।
(খ) কালার পেজে দিবেন।
১২.
(ক) অপশ্যই সিগনেচার দিবেন।
(খ) পাসপোর্টে যে সিগনেচার আছে সেম সেই সিগনেচার।)
১৩.
(ক) কোনদিন কখন, কোথায় যাবেন এবং কোন হোটেলে ফিরবেন তার একটা নমুনা ইংলিশে দিবেন।
(খ) বিভিন্ন স্পটের নাম দিবেন।
(গ) কি লিখেছেন সেটা মুখস্ত করে রাখবেন। যেন জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারেন।
১৪.
(ক)ইউটিলিটি বিল আপনি চাইলে বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস বিলের কপি দিতে পারেন
(খ) টিএন্ডটি বা পোস্টপেইড বিলের কপি দিতে পারেন।
(গ) কার্ড হলে কার্ডের ফটোকপি।
বাড়তি ডকুমেন্ট।
যদি পারেন, আপনার অপেশাদার ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি দিবেন। পেশাদার হলে দরকার নাই।
আপনার ইন্টারন্যাশনাল ক্রেডিট, ডেবিট বা প্রিপেইড কার্ডের ফটোকপি দিতে পারেন। অপস্য কার্ডের পিছনে সিকিউরিটি নাম্বারটা মুছে নিবেন।
নিজের বা নিজেদের বাড়ি হলে হোল্ডিং ট্যাক্সের ফটোকপি দিবেন।
বাড়তি ডকুমেন্টের ক্ষেত্রে কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে দিলে আপনার প্রোফায়েলটা স্ট্রং দেখাবে।
উল্লেখ্য, এখানে যা যা বলে সব মোটামুটি কম বেশ দেশে লাগে। কোন কোন দেশে দুয়েকটা বাদ যাবে আবার কোন কোন দেশ দুয়েকটা এড হবে। এখানে সব বলার কারণ, সামনে বিভিন্ন কান্ট্রির স্টোরি বলবো, তখন আর নতুন করে ডকুমেন্টসের কথা বলবোনা।
সব শেষে বলি, মায়ানমারের জন্য আমার ভিসা ছাড়া সব মিলিয়ে মোট খরচ হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ১০,০০০ টাকা। ইয়েস, প্লেন ভাড়াসহ অনলি ১০,০০০ টাকা। ইন্ডিয়া থেকেও অনেক কম খরচ হয়েছে। কিভাবে, জানতে চাইলে চোখ রাখুন পরপর্তি পোষ্টে। পরপর্তি পোষ্ট পাওয়ার আগে সবাই ভিসা রেডি রাখুন। পোস্ট পেলেই ঝাঁপিয়ে পড়বেন।
সবাইকে অগ্রিম ধন্যবাদ।
Saiful Islam
Industry is the key of Success.
No comments:
Post a Comment