This website is for information Bcs, Primary Exam Suggestions, Islamic questions, Govt jobs preparation. Exam Suggestions. Private Jobs News. And Other's.

Breaking

Sunday, November 3, 2019

চাকরির ভয়াবহ ফাঁদ - স্বপ্ন ভঙ্গে থমকে গেল মনোয়ারার জীবন সাবধান!!! যেখানে সেখানে চাকরির আবেদন নয়, এটা বড় ভুল হতে পারে। মনোয়ারা খাতুন। বয়স ২২ পেরিয়েছে


চাকরির ভয়াবহ ফাঁদ - স্বপ্ন ভঙ্গে থমকে গেল মনোয়ারার জীবন
সাবধান!!! যেখানে সেখানে চাকরির আবেদন নয়, এটা বড় ভুল হতে পারে।
মনোয়ারা খাতুন। বয়স ২২ পেরিয়েছে। বাড়ি যশোরের চৌগাছায়। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান। চরম অর্থ কষ্টের মধ্যেও লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছে, পড়ছে সম্মান শেষ বর্ষে। এতদিন পর্যন্ত পরিবার খেয়ে না খেয়ে পড়ালেখার খরচ যোগালেও এখন আর সেটি সম্ভব হচ্ছে না। পরিবার চাচ্ছে তাকে দ্রুত পাত্রস্থ করতে। তবে পরিবারের সে সিদ্ধান্ত মানতে পারছে না মনোয়ারা। কারণ তার দু’চোখজুড়ে রয়েছে স্বপ্ন। পড়ালেখা শেষ করে চাকরি করে স্বাবলম্বী হওয়ার তীব্র বাসনা। একদিকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্ন, অন্যদিকে বাড়ি থেকে বিয়ের তাড়া। তাই মনোয়ারার সামনে চাকরি খোঁজা ছাড়া বিকল্প নেই। এরইমধ্যে সে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আবেদনও করেছে।

মনোয়ারা জানান, চাকরির আবেদনের খরচ যোগাতে কলেজে রিক্সার পরিবর্তে পায়ে হেটে যেতে হয় তার। হাত খরচ ও ছোট ছোট শখগুলো অপূরণীয়ই থেকে যাচ্ছে। এভাবে কিছু টাকা জমায়। যে টাকা দিয়ে শুধুই চাকরির আবেদন করছে। সম্প্রতি পত্রিকায় প্রকাশিত একটি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে আবেদন করে মনোয়ারা। কিন্তু কে জানে সেই চাকরির বিজ্ঞপ্তিই মনোয়ারার স্বপ্নগুলো এলেমেলো করে দিবে! প্রতারক চক্র বিজ্ঞপ্তির ফাঁদে ফেলে মনোয়ারার তিল তিল করে জমানো শেষ সম্বলটাও হাতিয়ে নিয়েছে। এখন তার লেখা-পড়া শেষ করা, ভাল একটা চাকরি নেয়া এমন কি নিজের পায়ে দাঁড়ানোর সব আশায় গুঁড়ে বালি। স্বপ্ন ভঙ্গে থমকে গেছে তার বড় হওয়ার প্রতিতি।
ঘটনার বর্ণনায় চোখেমুখে চরম হাতাশা নিয়ে মনোয়ারা জানায়, বীজ প্রকল্প ও বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনার লক্ষ্যে স্ব-স্ব উপজেলা ও ইউনিয়নে লোকবল নিয়োগের লক্ষে বিজ্ঞপ্তি দেয় ‘বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন বাস্তবায়নে শিশু বিকাশ কেন্দ্র’। জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা লেখা ছিল-১৬৭, মতিঝিল সার্কুলার রোড, ইডেন বিল্ডিং, চতুর্থ তলা । বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতিষ্ঠানটিতে অফিস এক্সিকিউটিভ পদে আবেন করে মনোয়ারা। সাক্ষাৎকারের জন্য তাকে ডাকা হয় ১৫ জুলাই। সাক্ষাৎকার শেষে তাকে যোগ্য প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয় প্রতিষ্ঠানটির তরফ থেকে। পরে বিভিন্ন খরচ দেখিয়ে ৩ হাজার ৭৫০ টাকা চাওয়া হয়। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে চাকরি হবে না বলে সাফ জানিয়ে দেয়া হয় তাকে। নিরুপায় হয়ে নিজের জমানো সম্বলটুকু চাকরি দাতাদের হাতে তুলে দেয় মনোয়ারা। টাকা দেওয়ার দিনই মেলে স্বপ্নের চাকরির কাঙ্ক্ষিত নিয়োগপত্র।
চাকরি দেওয়ার নাম করে মনোয়ারার কাছ থেকে রসিদ দিয়ে জামানত বাবদ ৩৭৫০ টাকা নেয় প্রতিষ্ঠানটি।
মনোয়ারা জানায়, নিয়োগপত্র পেলেও তার চাকরি মেলেনি আজও। একাধিকবার ফোন দিয়েও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে না মনোয়ারা। সবশেষ ‘বাংলাদেশ শিশু উন্নয়ন বাস্তবায়নে শিশু বিকাশ কেন্দ্র’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামানের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হন চাকরিপ্রার্থী এই তরুণী। কামরুজ্জামান তাকে আশ্বস্ত করে বলেন, আপনার কাজে যোগদান সময়ের ব্যাপার মাত্র। আপনি ফিল্ড অফিসার পদে কাজ করতে আগ্রহী এমন আরও কয়েকজনকে নিয়ে আসুন। তাদের কাছ থেকে জামানত হিসেবে ১০ হাজার করে টাকা নিবেন। তা থেকে আপনি ৪ হাজার টাকা করে পাবেন।
উত্তরে মনোয়ারা জানতে চায়, ফিল্ড অফিসার খোঁজা তার কাজ না। তখন থেকেই তার সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠান। এরপর থেকে তাদের ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে খোলা থাকলেও রিসিভ হচ্ছে না। এদিকে মতিঝিলে যে অফিস ছিল সেটিও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মনোয়ারা জানায়, এখন বিষয়টি তার কাছে পরিস্কার যে, সে সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দিয়েছে। তাদের কয়েকজন কয়েকদিন আগে পুলিশের হাতে ধরাও পড়েছে।
এদিকে অভিযোগের সত্যতা জানতে কথিত ওই চাকরিদাতা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরুজ্জামানের সঙ্গে এই প্রতিবেদক যোগাযোগ করেন। শিশু বিকাশ কেন্দ্র প্রতারণার সঙ্গে জড়িত কিনা এ প্রতিবেদকের এমন প্রশ্নের সরাসরি জবাব না দিয়ে কামরুজ্জামান বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। রিমান্ড শেষে তাদের জামিনও হয়েছে। এখন মামলাটি বিচারাধীন আছে। আমরা আাইনিভাবে এটি মোকাবেলা করার চেষ্টা করছি।
অফিস ও শাখা না খুলে সারাদেশে নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা নিয়োগ দিয়েছি। আরও দিচ্ছি। ঢাকাসহ সারাদেশে শাখা খোলা হবে বলেই এসব নিয়োগ। কার্যালয় সাময়িকভাবে বন্ধ থাকলেও ৪ আগস্ট সেটি ফের খোলা হবে বলে জানান কামরুজ্জামান। তবে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার পরিচয় নিশ্চিত হতে চাইলে কামরুজ্জামান কিছুটা সময় নিয়ে ভীত কণ্ঠে জবাব দেন। না, না, আমি ব্যবস্থাপনা পরিচালক নই, আমি প্রতিষ্ঠানের অফিস সহকারী।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু মনোয়ারা নয়, এভাবেই বহু চাকরিপ্রার্থীর সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে স্বপ্ন ভঙ্গ করছে শিশু বিকাশ কেন্দ্রের মত ঢাকার বেশ কয়েকটি এনজিও নামধারী প্রতারক চক্র। বেকারদের চাকরি দেয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছে মোটা অংকের টাকা। পরে তারা কার্যালয় গুটিয়ে লাপাত্তা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব প্রতারক চক্র রাজধানীসহ এর আশপাশের এলাকা বিশেষ করে টঙ্গী ও গাজীপুরে কাজ করছে। রাজধানীতে থাকা এ ধরনের একটি চক্রের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় মামলা হয়েছে। এদের মধ্যে প্রতারক দম্পত্তিও রয়েছে। এরই মধ্যে এ চক্রের দুই নারীসহ পাঁচ সদস্যকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সংশ্লিষ্ট সূত্র এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানায়, চাকরির প্রতারক চক্রের সদস্যরা একেক সময় একেক এনজিওর নাম ব্যবহার করে। টাকা হাতিয়ে নেয়ার পর গুটিয়ে নেয় অফিস। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহে ২০৯০টি পদে নিয়োগের জন্য ভুয়া বিজ্ঞাপন দিয়ে ধরা পড়া প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্য পুলিশকে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে। দ্বীপক কুমার দেব নামে এক চাকরি প্রার্থীর মামলা এবং ২০-২৫ জন ভুক্তভোগীর অভিযোগের পরিপ্র্রেক্ষিতে রাজধানীর মতিঝিল থানা পুলিশের একটি দল তাদের মতিঝিল থেকে গ্রেফতার করে। তাদের আদালতে হাজির করে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন জানান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই মঞ্জুরুল আহসান খান। শুনানি শেষে আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। তারা হলো- মাহবুবুর রহমান, সুজিত কুমার ঘোষ, রোকসানা আক্তার, রবিন ও মায়া রানী রায়।
প্রতারক চক্রের এ ধরনের চটকদার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ফাঁদে ফেলছে চাকরি প্রার্থীদের।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পুলিশকে জানিয়েছে, সর্বশেষ যে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিটি পত্রিকায় প্রকাশ করেছিল তার মাধ্যমে এক কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল তাদের। গ্রেফতার ব্যাক্তিরা জানায়, অফিস নেয়ার পর তারা ওই অফিসের ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেয়। ১৪ জুন একটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তিতে সাতটি পদে দুই হাজারের বেশি জনবল নিয়োগের কথা বলা হয়। এসব পদের মধ্যে জেলা প্রোগ্রাম অফিসার পদে ৪০, উপজেলা প্রোগ্রামার ১৫০, ব্রাঞ্চ ম্যানেজার ২৫০, অফিস এক্সিকিউটিভ (নারী) ৩০০, ব্লক সুপারভাইজার ৩৫০, ইউনিয়ন সুপারভাইজার ৪০০ এবং ফিল্ড অফিসার ৬০০। এর আগে একই ধরনের পদে ৭২০ জনকে নিয়োগের বিজ্ঞাপন দেয় প্রতারক চক্রের সদস্যরা। এক মাসের মধ্যেই সব প্রক্রিয়া শেষ করে ট্রেনিংয়ের নামে জনপ্রতি ৪-৫ হাজার টাকা নেয়া হয়। এরপরই চাকরি প্রার্থীদের হাতে নিয়োগপত্র তুলে দেয়া হয়। নিয়োগপত্রে যোগদানের তারিখ দেয়া ২-৩ মাস সময় হাতে রেখে। ওই সময়ের মধ্যে নিয়োগপত্র হাতে পাওয়া চাকরি প্রার্থীদের কাছে আরও লোকবল চাওয়া হয়। তারা যেসব লোকবল এনে দেয় তাদের কাছ থেকেও একই কায়দায় টাকা হাতিয়ে নেয় চক্রটি । এরপর তারা (প্রতারক) অফিস গুটিয়ে চম্পট দেয়। গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, তাদের চক্রের প্রধানের নাম জাহাঙ্গীর আলম আকাশ। আকাশ হল গ্রেফতার রোকসানা আক্তারের স্বামী। স্বামীর সাজানো অফিসে রোকসানা রিসিপশনিস্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করত।
এ বিষয়ে মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) গোলাম রব্বানী গণমাধ্যমকে জানান, এ চক্রের সদস্যরা অনেক দিন ধরে প্রতারণা করলেও ইডেন ভবনে তারা মাস দুয়েক আগে অফিস নেয়। এরই মধ্যে তারা ৬০-৭০ চাকরি প্রার্থীর কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। চক্রের ৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ চক্রের প্রধান আকাশকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে বলে জানান গোলাম রব্বানী।

Industry is the key of Success.


No comments:

Post a Comment

Translate

Popular Posts